
কক্স২৪নিউজ ডেস্ক।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার ভাই এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি শেয়ার অবরুদ্ধ করলো সিআইডি।
আজ বুধবার (১৯ নভেম্বর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। (সিআইডি) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায়।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খানের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তাঁর ভাই ইউসিবি ব্যাংক পিএলসি-এর সাবেক পরিচালক আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি এবং রনির স্ত্রী মেঘনা ব্যাংক পিএলসি-এর সাবেক পরিচালক ইমরানা জামান চৌধুরী-এর নামে থাকা মেঘনা ব্যাংকের প্রায় সাড়ে চার কোটি শেয়ার অবরুদ্ধ করেছে সিআইডি। অনুসন্ধানে অবৈধ অর্থ দিয়ে এসব শেয়ার ক্রয়ের প্রমাণ পাওয়ায় আদালতের নির্দেশে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
সিআইডি আরো জানায়, অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অভিযুক্তদের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন ব্যক্তিগত হিসাব এবং তাদের কাগুজে প্রতিষ্ঠান Steadfast Management Trading Limited-এর নামে মোট ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৩০ হাজার ২০০ শেয়ার ক্রয় করা হয় যার তৎকালীন বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৫৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। উক্ত শেয়ার পরে স্টক ডিভিডেন্ড যোগ হয়ে মোট শেয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৫৫টি’তে উন্নীত হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি, জালিয়াতি এবং সংঘবদ্ধ অপরাধের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ অর্জন করেছেন। এই অর্থের একটি অংশ বিভিন্ন মাধ্যমে বিদেশে প্রেরণ করা হয় এবং পুনরায় দেশে এনে বৈধ করার চেষ্টা করা হয় মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়।
অপরাধ তদন্ত বিভাগের প্রাথমিক অনুসন্ধানে আরও জানা যায় যে, ২০২২ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, সিঙ্গাপুর ও দুবাই থেকে মোট ২ কোটি ২২ লক্ষ ৫ হাজার ৪৪৪ মার্কিন ডলার দেশে আনা হয়। এই টাকা অভিযুক্তদের সহযোগী আবুল কাসেম এর মাধ্যমে ইউসিবি ব্যাংক ও এনআরবিআইসি ব্যাংকের এফসি অ্যাকাউন্টে জমা হয়। পরবর্তীতে ইমরানা জামান চৌধুরী এবং Steadfast Management Trading Limited-এর নামে মোট ৬০ কোটি টাকা নগদ ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা করা হয়। ওই অর্থ কমিউনিটি ব্যাংকের একটি বিশেষ অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে ৫৯.৯৫ কোটি টাকা মেঘনা ব্যাংকের শেয়ার ক্রয়ে ব্যবহার করা হয়।
“Steadfast Management Trading Limited” নামীয় প্রতিষ্ঠানটিতে উৎপল পালকে ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং নাসিম উদ্দিন মোহাম্মদ আদিলকে ডিরেক্টর হিসেবে দেখানো হয়েছে। উভয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এর মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপেরও কর্মচারী এবং ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে সিআইডির অনুসন্ধানে প্রকাশিত হয় বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত গত ১৮/১১/২০২৫ খ্রি. তারিখে সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব সম্পদ জব্দের আদেশ প্রদান করেন।
তারা আরো জানায়, ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট এই অনুসন্ধান পরিচালনা করছে। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অজ্ঞাত অপর সদস্যদের সনাক্তকরণ ও অন্যান্য আইনানুগ প্রক্রিয়ার স্বার্থে সিআইডির অনুসন্ধান এখনও অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ১৮৮৮ কোটি টাকার সম্পত্তি কিনে দেশজুড়ে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ আছে, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয় বিদেশে পাচার করে যুক্তরাজ্যে অন্তত ৩৬০ টি সম্পত্তির মালিক ছিলেন তিনি। পাশাপাশি দুবাইতেও রয়েছে তার তিন শতাধিক বাড়ি। সাইফুজ্জামানের স্ত্রী ও সন্তানসহ নিজের নামে সারাবিশ্বে মোট ৭২৩ টি সম্পত্তির নথি পেয়েছিলো আলজাজিরার অনুসন্ধানী দল।
২০২৪ এ সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন তিনি।