
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) আয়োজিত ‘লগি-বৈঠার লাশতন্ত্র থেকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের উত্থান: ২৮ অক্টোবর প্রেক্ষিত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এই জাতীয় ঐক্যের আহবান জানানো হয়।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, আধিপত্যবাদ বিরোধী দেশপ্রেমিক শক্তির বৃহত্তর ঐক্য যতবার দুর্বল হয়েছে ততবারই ফ্যাসিবাদের চরম প্রকাশ ঘটেছে। জুলাই বিপ্লবের অর্জন ধরে রাখতে না পারলে ভবিষ্যতে আবারও লগি-বৈঠার তাণ্ডব মাথাচাড়া দিতে পারে। তাই ভিন্নধারার রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন, শিক্ষক সমাজ এবং পেশাজীবীদের পারস্পরিক বিরোধ দূর করে একটি আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্যে দাঁড়াতে হবে। এই ঐক্য ভেঙে গেলে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব আবারও বিপন্ন হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার প্রথম ফ্যাসিবাদের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবরের ঘটনা। এই মর্মান্তিকতা ও নিষ্ঠুরতা গোটা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে এবং বাংলাদেশের মানুষ এতে হতবাক হয়েছে। ঠান্ডা মাথায় আঘাত করার পর মাটিতে শুয়ে পড়া মানুষের ওপর নারকীয় নৃত্যের উল্লাস ছিল এক ভয়াবহতা। কেবল বাংলাদেশের মানুষ নয়, স্বয়ং জাতিসংঘের মহাসচিবও এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলেন।
তিনি বলেন, পূর্বের কোনো ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। নতুন প্রজন্ম কোনো পুরনো পরিস্থিতি না ভেবে নতুন কিছু ভাবছে এবং এই নতুন ভাবনা দিয়েই আমাদের দেশকে গড়ে তুলতে হবে। আন্দোলন সংগ্রামে যারা অংশগ্রহণ করেছে, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল-ইসলামী ছাত্রশিবির- বামপন্থী-ডানপন্থী যেই হোক সবাই নিজস্ব মতামত নিয়ে, নিজস্ব চিন্তা নিয়ে, পারস্পরিক ডিসকোর্স, ডিসকাশন এবং আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও কোনো কোনো জায়গায় একটা সিম্পল পয়েন্টে আবার আমাদেরকে একত্রিত থেকে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমাদের বাঁচাতে হবে। ফ্যাসিস্টদের যেন কোনো পুনরাবৃত্তি না হয়; তারা যা যা করেছে, তার পাল্টা কাজগুলো করতে হবে। এমন ঐক্যের মাধ্যমেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং দেশকে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
আলোচনা সভায় ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, ২৮শে অক্টোবর খুনি হাসিনা ও তার দোসররা প্রকাশ্য দিবালোকে লাশের ওপর নৃত্য করেছিল। খুনি হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট হতে যারা সহযোগিতা করেছে, তারা হলো ‘কালচারাল ফ্যাসিস্ট’, যারা বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব নষ্ট করতে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ষড়যন্ত্র করছে। জুলাই বিপ্লবের পর বাংলাদেশপন্থী মানুষ আজাদি পেলেও, এই কালচারাল ফ্যাসিস্ট শক্তি এখন জনগণের মধ্যে বিভাজন তৈরির জন্য নতুনভাবে চক্রান্ত করছে। তাই ২৮শে অক্টোবর থেকে শিক্ষা নিয়ে এই কালচারাল ফ্যাসিবাদ, কালচারাল ফ্যাসিস্ট এবং মুজিববাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যদি শত্রু ও মিত্র চিনতে ভুল করা হয়, তবে আবারও দীর্ঘ দুঃশাসন আসতে পারে।
তিনি বলেন, ২৮শে অক্টোবর থেকে শুরু করে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, আল্লামা সাঈদীর রায়ের পরবর্তী গণহত্যা, বিচারিক হত্যাকাণ্ড, বেগম জিয়ার কারাবন্দীত্ব এবং বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নকারী সকল চক্রকে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের আওতায় আনা হয়। একই সাথে, জুলাইয়ে সংঘটিত গণহত্যা ও শিশুহত্যার বিচার এবং খুনি হাসিনাকে দেশে এনে ফাঁসিতে ঝোলাতে হবে। খুনি হাসিনা এবং তার দোসরদের, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ এর বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই, কারণ এরা লাশতন্ত্র কায়েম করে দেশকে ভারতের ‘সাবলেট কলোনি’ বানিয়েছিল এবং শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করেছিল।
ডাকসুর ভিপি জাতীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, ঐতিহাসিক এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ও আদর্শিক ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও ‘খুনি হাসিনার বিচার প্রশ্নে’ এবং ‘বাংলাদেশ প্রশ্নে’ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যে কোনো দল যদি এই ঐক্যে ব্যর্থ হয় বা জুলাই বিপ্লবের চেতনা ক্ষুণ্ণ করে, তবে তার বিরুদ্ধে কথা বলা হবে। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এই ঐতিহাসিক সুযোগে ৫৪ বছর পরে বাংলাদেশটাকে একটি পূর্ণাঙ্গ নেশন হিসেবে বিনির্মাণ এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করুন।
২৮ অক্টোবর নিয়ে রাজনৈতিক পর্যালোচনা জরুরি বলে উল্লেখ করে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, জামায়াত এবং বিএনপি যতবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছে ততবার আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পরাজয় হয়েছে। আর যখনই তারা বিচ্ছিন্ন বা বিক্ষিপ্ত হয়েছে ততবারই আওয়ামী লীগের উত্থান ও ফ্যাসিবাদের চরম প্রকাশ ঘটেছে। বারবার অনৈক্য এবং এর প্রেক্ষিতে রক্তাক্ত ইতিহাস সৃষ্টি হওয়া নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। এই অনৈক্য থেকে শিক্ষা না নিলে ভবিষ্যতে আরও অনেক ২৮ অক্টোবর, ৫ই আগস্ট বা জুলাই বিপ্লব আসবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা আবার আগের জায়গায় ফিরে যাব। যে রাজনৈতিক দল প্রকাশ্যে দিবালোকে মানুষকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারতে পারে, পুড়িয়ে দিতে পারে বা মাথা চূর্ণ বিচূর্ণ করতে পারে, তাদের মধ্যে আর মনুষ্যত্ব থাকতে পারে না। বিশ্বের সকল মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘের কাছে আওয়ামী লীগকে একটি নিষিদ্ধ ও সন্ত্রাসবাদী দল হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।
আলোচনা সভায় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানিয়ে ঢাবির বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মো. মহিউদ্দিন বলেন, আপনাদের দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে এসে একটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ আপনাদের থাকতেই হবে সেটা হল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। আওয়ামীলীগ যদি আপনাদের ভুলের কারণে অথবা আপনাদের পারস্পরিক বিরোধের কারণে আবার যদি তাদের ফিরে আসার কোনো রকম সুযোগ সৃষ্টি হয় এটা অ্যাফোর্ড করার ক্ষমতা আর কিন্তু বাংলাদেশে নাই। ভবিষ্যতে একটা জায়গায় ইস্পাত কঠিন আমাদের ঐক্য থাকতে হবে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ এই দেশে যেন আর প্রতিষ্ঠিত না হতে পারে। এই ঐক্যের বিষয়টি আমাদের ছাত্র সংগঠন, আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের সবার আগে দেখতে হবে। আমাদের পারস্পরিক প্রতিযোগিতা থাকবে বা সমালোচনা থাকবে, কিন্তু এই জায়গাটায় আমাদের বিচ্যুত হয়ে চলবে না।
ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংকের আহবায়ক অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান বিশ্বাস বলেন, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের এক বছরের মধ্যে যে বিভেদ তৈরি হয়েছে যার পরিণতি কোনো জায়গায় ঐক্যমত হচ্ছে না। ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধেও একমত না হলে যা হবার তার নমুনা কি রাজনৈতিক দলগুলো, ছাত্র সংগঠনগুলো, অন্যান্য পেশাজীবী সংগঠনগুলো দেখতে পায় না? দেশ-বিদেশ থেকে বুদ্ধিজীবী সহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর থেকে হুংকার দেয়, বিবৃতি দেয়। আমি যা বলতে চাচ্ছি সেটি অনুধাবন করে রাজনৈতিক দলগুলো যদি ঐক্যের মাধ্যমে এগোয় তাহলেই এদেশের যে কাঙ্ক্ষিত বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের ফল এদেশে আসতে পারে, নতুবা নয়।
ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এস এম ফরহাদ বলেন, ২০১৩-২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত-ছাত্রদল-ছাত্রশিবির একসাথে আন্দোলন করছিল তখন একটি পক্ষ সংঘবদ্ধভাবে সেই আন্দোলনকে ‘সন্ত্রাসী আন্দোলন’ আখ্যা দিয়ে ‘ক্রিমিনালাইজ’ করার এবং দেশের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে শতাধিক আসনে আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসার পরও সেই পক্ষটি আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকে ন্যায্যতা প্রদান করেছিল। এখন সেই একই প্রতিনিধি, স্টেকহোল্ডার এবং বুদ্ধিজীবী মহল যারা গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগকে জাস্টিফাই করেছে এবং বিরোধী পক্ষকে ‘ভিক্টিম’ বানানোর সকল ব্যবস্থা করেছে, তারা ‘রং বদলে’ এখন ঐক্যের মধ্যে ঢুকে ভাঙন সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে এবং নানা বয়ান পুশ করছে। আমি আহবান জানাবো যেসব জাতীয় নেতৃবৃন্দ দীর্ঘদিন ধরে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ভূমিকা রেখেছেন, তারা যেন চিহ্নিত এবং রং বদলানো এই মানুষগুলোর বয়ান গ্রহণ করে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করা বা অনুচিত বিষয়ে জড়িয়ে না পড়েন।
২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবরের ঘটনাপ্রবাহের দিকে ইঙ্গিত করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড.শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, নয়াপল্টনে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী ভাইদের আরেকটি বড় সমাবেশ ছিল। সম্মিলিতভাবে এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারলে আরও ভালো হতো না? এই দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি শুধু জামায়াত বা আমাদের ১৩ জন ভাইকে হত্যা করেই শেষ হয়নি বরং এই পরিণতি বাংলাদেশকে ১৫ বছরের জন্য একটি কারাগারে পরিণত করেছিল। আমরা যদি আবার মনে করি যে ব্যক্তিগতভাবে শফিকুল ইসলাম মাসুদ, সাদিক, রুহুল কবির রিজভী ভাই বা মুজিবুর রহমান মঞ্জু ভাই শুধু জিতবেন তাহলে ব্যক্তি জিতে যাবে কিন্তু বাংলাদেশ হেরে যাবে। যদি আবার কোনো কারণে আমাদের মধ্যে বিভেদের রাজনীতি ছড়ায়, বিভেদের বিষবাষ্প ছড়ায় অথবা সেই আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের বক্তব্য, তাদের কথন, তাদের শেখানো বুলি আবার কারো মুখ থেকে বের হয় তাহলে শুধু ১৫ বছর নয় আবার আমাদেরকে ৫০ বছরের জন্য এই বাংলাদেশের এক বিরাট ইতিহাসের করাল গ্রাসে পড়তে হতে পারে।
২৮ অক্টোবর হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলের ট্রেইলার ছিল উল্লেখ করে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি জাহিদুর রহমান বলেন, এই মর্মান্তিক ঘটনার বিরুদ্ধে আমরা ছাত্রদল, ছাত্রশিবির একসাথে ময়দানে আমরা মিছিল করেছি। ঐ মিছিলে আমার ডান হাতে ছিল পিন্টু ভাই এবং বাম হাতে ছিল ইলিয়াস আলী ভাই। এইভাবেই আমরা মিছিল করে শেষ পর্যন্ত আমাদের মিছিলটা শেষ করেছি। ওই রাজনৈতিক সম্প্রীতিটা ওই সময়টাতে ছিল এবং সেই রাজনৈতিক সম্প্রীতির বাংলাদেশটাকে আমরা চাই। ওই রাজনৈতিক সম্প্রীতিটা যদি আমরা আবার পুনরুদ্ধার করতে পারি তাহলে একটি সমৃদ্ধ একটি সুন্দর বাংলাদেশ আমরা পাব। যে বাংলাদেশের জন্য আমাদের জুলাই যোদ্ধারা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, যে সুন্দর বাংলাদেশের জন্য মাসুম, শিপন, মুজাহিদরা জীবন দিয়েছেন সেই বাংলাদেশের জন্য সম্প্রীতির রাজনীতি আমাদের খুব বেশি প্রয়োজন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক শেখ ফজলুল করিম মারুফ বলেন, সেদিন যেভাবে মানে মানুষের উপরে লাফানো হলো এরকম করে একটা কুকুরের উপরে লাফাইলে মানুষের মন কাঁদবে। কিন্তু সেইদিনের ঘটনার পর থেকে আজ পর্যন্ত সেই ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের এত এত বুদ্ধিজীবী, এত এত পত্রিকা, কবি, সাহিত্যিক অনেক কিছু কেউ কিন্তু সেটাকে অপরাধী হিসেবে গণ্য করল না। তার মানে বাংলাদেশের মনস্তত্বে এমন একটা ধারণা তৈরি করা হয়েছে এত বেশি ঘৃণা উৎপাদন করা হয়েছে একটা নির্দিষ্ট আদর্শের বিরুদ্ধে, একটা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যে প্রকাশ্যে মানুষ মেরে ফেলা যাবে, তারপরে লাফানো যাবে, মানে নির্মমতা চূড়ান্ত করা যাবে কেউ কোনো কথা বলবে না।
জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ২৮ শে অক্টোবরের লগি-বৈঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রকাশ্যে মানুষকে নির্মমভাবে পিটিয়ে মারা এবং লাশের উপর নৃত্য করার ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশের পুরো রাজনীতির একটা বর্বরতম অধ্যায় সেটা সেখান থেকে শুরু হয়েছে। এই মর্মান্তিক ঘটনার দৃশ্যগুলো নিহতদের পরিবারের সদস্যরা এখনও ভুলতে পারে না। এর সাথে আমার নিজেকেও আমি সম্পর্কযুক্ত করতে পারি। ২০১৯ সালে ডাকসু ভবনে তখন ভিপি নুরুল হক নুরুল ভাই সহ আমাদের উপর যে হামলাটা হয়েছিল। আমাকে মারতে মারতে বাহিরের মধুর ক্যান্টিনের সামনে খুব নির্মমভাবে মেরেছিল। সেই ভিডিওটি এখনও আমার মা ভুলতে পারেনা৷
গণঅধিকার পরিষদের দলীয় মুখপাত্র ও সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আল্লাহর এক অপার মহিমায় আল্লাহর রহমতে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা এই বাংলাদেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছি। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে রক্ত এবং আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজকে আমরা একটি ফ্যাসিবাদ মুক্ত নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। এই বাংলাদেশ যদি আমরা ধরে রাখতে না পারি তাহলে কিন্তু আগামীতেও এরকম লগি-বৈঠার তাণ্ডব লীলা আবারো শুরু হতে পারে। এজন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে সতর্ক এবং সজাগ থাকতে হবে।
ডাকসুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ বলেন, গত ১৫-১৬ বছর যাবত ফ্যাসীবাদী লীগ যে জুলুম নির্যাতন গুম, খুন, আয়নাঘর ইত্যাদি চালিয়েছিল যে ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল তার সূচনা করেছিল ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরে লগি বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ খুন করে লাশের উপর নিত্য করে। আর সেই সূচনা লগ্ন থেকে কালচারাল ফ্যাসিস্টরা ফ্যাসিবাদের পক্ষে বয়ান উৎপাদন করেছে এবং সরাসরি ফ্যাসিবাদে অংশগ্রহণ করেছে। ২৮ অক্টোবর ২০০৬ বাংলাদেশ পথ হারালেও ২০২৪ এর ছাত্রজনতার বিপ্লবের মাধ্যমে আবারো বাংলাদেশ পথ খুঁজে পেয়েছে। বাংলাদেশকে আমরা আর পথ হারাতে দিব না।
অনুষ্ঠানে ২৮ অক্টোবরের শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন শহীদ হাফেজ গোলাম কিবরিয়া শিপনের পিতা তাজুল ইসলাম এবং শহীদ মাসুমের ভাই।