ঢাকা মহানগর প্রতিনিধি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, বর্তমান সময় হচ্ছে জুলাই সনদ এবং জুলাই ঘোষণার আইনি ভিত্তি দেওয়ার উপযুক্ত সময়। তিনি প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আপনি সবাইকে ডাকুন, কনস্টিটিউশনাল অর্ডারের মাধ্যমে অথবা একটা রেফারেন্ডামের মাধ্যমে এখনো সময় আছে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিয়ে নির্বাচন করুন। তিনি আরও বলেন, কেউ কেউ বলছেন যে; এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না। আমরা দেখছি অনেক সাংবিধানিক মেজর ইস্যুতে যে ভিন্নমতগুলো রয়েছে, আমরা বলেছি ঐকমত্য কমিশনও বলেছে দু’বারের অধিক কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবে না। জুডিশিয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী চাইলেও হবে না। এই সংস্কার যদি এখন না হয়, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য যদি ঠিক করা না হয়, আর তা যদি নির্বাচনের আগে না হয়, বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোতে যদি আবার নির্বাচন হয়, তাহলে এই নির্বাচনের মাধ্যমে আরেকটি ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে। বিদ্যমান কাঠামোতে নির্বাচন হলে আরেকটি হাসিনার জন্ম হবে। বাংলার মানুষ আর ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে দেবে না।
১৮ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) বিকালে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেইটে ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াত আয়োজিত বিক্ষোভপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সরকারের উদ্দেশে আরও বলেন, আপনারা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড মেইনটেইন করতে পারছেন না। তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কীভাবে? তাই আমাদের দাবি—আপনারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিন। সাংবিধানিক অর্ডার জারি করুন। গণভোট দিন। ফ্যাসিবাদের কার্যক্রম স্থগিত করুন। এবং আপনারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, ‘নির্বাচনের আগে দৃশ্যমান বিচার করবেন।’ আমাদেরও দাবি নির্বাচনের আগেই তা দৃশ্যমান করতে হবে।
তিনি সরকারের উদ্দেশে আরও বলেন, আর্টিকেল ৭-এর ভিত্তিতেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে তার আলোকে নির্বাচন দিতে হবে। এখন যদি দুই–তিন মাস আলোচনার পর একটি দল বলে যে এটা পরে হবে, তাহলে কেন এত পরিশ্রম করালেন? সেজন্যই বলছি আমাদের আন্দোলন রাজনীতির অংশ। আমাদের রাজনীতি জনগণের আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরার জন্য। আমরা আলোচনার টেবিলে নিষ্পত্তির জন্য আশাবাদী। আমরা নিরাশ নই।
তিনি বলেন, আমাদের দাবি পিআর মানতে হবে। সার্ভেতে ৭০ ভাগ মানুষ পিআরের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে। ঐকমত্য কমিশনে ৩১ দলের মধ্যে ২৫টি দল পিআরের পক্ষে রয়েছে। একটি দলের কেউ কেউ বলছেন, পিআর খায় না মাথায় দেয়। কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এটা বলতে পারে না। তাই পিআর বাস্তবায়নের জন্য গণভোট দিন। রায় পিআরের পক্ষে আসে নাকি বিপক্ষে আসে যাচাই করুন। জনগণ যদি পিআর মানে তাহলে আপনাদেরও মানতে হবে। আর জনগণের রায় যদি পিআরের বিপক্ষে যায় তাহলে আমরা জামায়াতে ইসলামী মেনে নেবো। কিন্তু তারা তো গণভোটকে ভয় পাচ্ছে। পিআরের মধ্য দিয়ে সকলের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে যদি পেশীশক্তি ও কালো টাকামুক্ত কোয়ালিটিপূর্ণ পার্লামেন্ট হয়, সরকার গঠন হয়, তাহলে কোনো দলের পক্ষে ফ্যাসিবাদী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই, তাই তারা পিআর ঠেকাতে চায়। তিনি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জনগণকে রাজপথে থাকার আহ্বান জানান।
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিমের যৌথ সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও ড. এ. এইচ. এম. হামিদুর রহমান আজাদ। উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর ড. হেলাল উদ্দিন, সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসাইন, অ্যাডভোকেট কামাল হোসাইন, ড. আবদুল মান্নান, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, নাজিম উদ্দিন মোল্লা, ইয়াসিন আরাফাত প্রমুখ।
বিক্ষোভ মিছিলটি বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেইট থেকে শুরু হয়ে জিপিও মোড়, পল্টন মোড় ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দিয়ে মৎস্য ভবন মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীসহ হাজার হাজার জনতা অংশ নেয়।