কক্স২৪ নিউজ আন্তর্জাতিক ডেস্ক।
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে নিয়ন্ত্রণ শক্ত করতে নতুন করে আগ্রাসী অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। রবিবার (৩১ আগস্ট) ভোর থেকে সারাদিনের গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলায় অন্তত ৭৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে শিশু, সাংবাদিক ও খাদ্য সহায়তার অপেক্ষায় থাকা সাধারণ মানুষও রয়েছেন। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) আল জাজিরা এ তথ্য প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা সিটি দখলে রাখতে এবং প্রায় ১০ লাখ বাসিন্দাকে দক্ষিণে ঠেলে দিতে ইসরায়েল সেনারা অভিযান জোরদার করেছে। নিহতদের মধ্যে শুধু খাদ্য সংগ্রহ করতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ৩২।
ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানায়, গতকাল রবিবার আল-কুদস হাসপাতালের নিকটে ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে একটি তাঁবুতে আগুন ধরে যায়। রিমাল এলাকায় এক আবাসিক ভবনে আঘাতে পাঁচজন নিহত ও তিনজন আহত হন।
গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয়ের পরিচালক ইসমাইল আল-থাওয়াবতা অভিযোগ করেন, আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি সেনারা ‘বিস্ফোরক রোবট’ ব্যবহার করছে এবং জোর করে মানুষকে সরিয়ে নিচ্ছে।
তিনি জানান, শুধু গত তিন সপ্তাহেই অন্তত ৮০টি বিস্ফোরক ডিভাইস বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে, যেটিকে তিনি ‘ভূমি পোড়াও নীতি’ বলে অভিহিত করেন। তাঁর দাবি, ধ্বংস আর দুর্ভিক্ষের মধ্যেও উত্তর গাজা ও গাজা সিটির প্রায় ১০ লাখ মানুষ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়ার নীতি মানতে অস্বীকার করছে।
ইনস্টাগ্রামে সাংবাদিক ফায়েজ ওসামার প্রকাশিত একটি ভিডিও যাচাই করে আল জাজিরা জানায়, সাবরা এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলার পর আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়। আহত এক শিশুকে রক্তাক্ত পায়ে চিৎকার করতে দেখা গেছে, আরেকজন মাটিতে পড়ে ছিল গুরুতর মাথার আঘাত নিয়ে। আশপাশের ভবনগুলো পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে।
আগস্টের শুরু থেকেই গাজা সিটি নিরবচ্ছিন্ন গোলাবর্ষণে কাঁপছে। গত শুক্রবার শহরটিকে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ ঘোষণা করে ইসরায়েল নতুন করে হামলার পরিকল্পনা জানায়। আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ রোববার বলেন, “অবিরাম গোলাবর্ষণ আর বুলডোজার দিয়ে ঘরবাড়ি ভেঙে গাজা সিটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হচ্ছে। সেখানে প্রকৃত যুদ্ধ নেই, শুধু বসতবাড়ি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। মানুষ পালানোর সুযোগও পাচ্ছে না, কারণ কোথাও নিরাপদ আশ্রয় নেই।”
রবিবারের হামলায় আরও একজন সাংবাদিক নিহত হন। আল-কুদস আল-ইয়াওম টিভির সংবাদকর্মী ইসলাম আবেদ গাজা সিটিতে নিহত হয়েছেন। গাজার গণমাধ্যম দপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ২৪৭ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। অন্য হিসাবে এ সংখ্যা ২৭০ ছাড়িয়েছে। সোমবার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে বোমা হামলায় অন্তত ২১ জন নিহত হন, এর মধ্যে পাঁচজন সাংবাদিক।
চলমান সংঘাতে গাজায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৩ হাজার ৪৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষ। অন্যদিকে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণে ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন এবং প্রায় ২০০ জনকে আটক করা হয়েছিল।
রবিবার ইসরায়েলি সেনাপ্রধান আইয়াল জামির শীর্ষ কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করে আরও বড় আকারে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন। তাঁর দাবি, লড়াই জোরদার করতে অতিরিক্ত রিজার্ভ সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, হামাসের সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেড জানিয়েছে, শনিবার তারা গাজা সিটিতে ইসরায়েলি বাহিনীর দুটি যানবাহন লক্ষ্যবস্তু করেছে। এর একটি মার্কাভা ট্যাংকে নিক্ষেপ করা হয় ইয়াসিন-১০৫ রকেট, আরেকটি ডি-৯ বুলডোজারকে ধ্বংস করা হয় বিস্ফোরক দিয়ে।