কক্স২৪ নিউজ ডেস্ক।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত আমীর পরিবেশবিদ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ শ্রমজীবী। সুতরাং এ বিশাল জনগোষ্ঠীর ভোটেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা নির্ধারিত হবে। আগামী নির্বাচনে শ্রমজীবী মানুষরা যাদেরকে ভোট প্রদান করবেন তারাই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হবে।
তিনি গতকাল ৯ আগস্ট জামালখানস্থ মহানগরীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরের কার্যকরী পরিষদের সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ও নগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান-এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরী-এর সঞ্চালনায় এতে আরও উপস্থিত ছিলেন নগর সহ-সভাপতি নজির হোসেন, সহ-সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শিহাব উল্লাহ, অধ্যক্ষ আসাদ উল্লাহ আদিল, অর্থ সম্পাদক মুহাম্মদ নুরুন্নবী, ট্রেড ইউনিয়ন সম্পাদক মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম, অফিস সম্পাদক স ম শামীম, সহ-প্রচার সম্পাদক আবদুর রহিম মানিক, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মজুমদার ও পাঠাগার সম্পাদক ইন্জি: সাইফুল ইসলাম, আইন আদালত সম্পাদক সাব্বির আহমদ উসমানী প্রমুখ।
নজরুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য শ্রম আইন সহ নানা আইন কানুন করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এসব আইন-কানুন শুধুমাত্র কাগজে লিপিবদ্ধ হয়েছে। বাস্তবায়ন আর হয়নি। শ্রমজীবী মানুষ নেতাদের কথার ফুলঝুরিতে বিভ্রান্ত হয়ে তাদেরকে বছরের পর বছর রাষ্ট্র ক্ষমতা অর্পণ করেছে। কিন্তু এসব নেতারা রাষ্ট্রক্ষমতা পেয়ে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও মর্যাদা বেমালুম ভুলে গেছে। আমরা নিকট অতীতেও দেখতে পেয়েছি অধিকার আদায়ের জন্য শ্রমিকদের যখন তখন রাজপথে নেমে আসতে হয়েছে। দুঃখজনক হলে সত্য শ্রমিকরা যখন তাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে রাজপথে এসেছে তৎকালীন সরকার শ্রমিকদের আন্দোলনকে স্তিমিত করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বুলেট ব্যবহার করেছে। অসংখ্য শ্রমিক বিভিন্ন আন্দোলনে নিহত ও আহত পঙ্গুত্ববরণ করেছে। এইভাবে প্রতিটি আন্দোলন দমে গিয়েছে। শ্রমিকের অধিকার আর আদায় হয়নি।
তিনি বলেন, শ্রমিকরা দিনরাত মেহনত করে রুটি রুজির জন্য। পরিবার-পরিজন নিয়ে দুমুঠো ভাত খেয়ে জীবন অতিবাহিত করার জন্য। শ্রমিকরাতো তাদের ন্যায্য পাওনা ও অধিকারের বেশি কিছু চায় না। তাহলে কেন শ্রমিকদের এই সামান্য পাওনা ও অধিকার দিতে সরকার গড়িমসি করে? এর একমাত্র কারণ হচ্ছে আমাদের দেশে যারা রাষ্ট্রক্ষমতা আসীন হয় তারা উচ্চবিত্তদের সরকারের পরিণত হয়ে যায়। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিকের অধিকার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা যে রাষ্ট্রের দায়িত্ব এ কথা তারা ভুলে যায়। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হচ্ছে রাষ্ট্রক্ষমতায় শ্রমিক দরদী ও সৎ দক্ষ খোদাভীরু নেতৃত্বের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা অর্পণ করা।
নজরুল ইসলাম আরও বলেন, এখন সময় এসেছে শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার। আগামী নির্বাচনে শ্রমিকদের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। দল ও মার্কা দেখে ভোট নয় বরং প্রার্থী দেখে ভোট দিতে হবে। শ্রমিকরা যেন যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচন করতে পারে এজন্য শ্রমিক কল্যাণের নেতৃবৃন্দকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রতিটি পাড়া মহল্লায় স্বতন্ত্র শ্রমিক ইউনিট গঠন ও মজবুত করতে হবে। সেক্টর নেতৃবৃন্দকে তাদের স্ব স্ব সেক্টরের শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করছি, শ্রমিকদের ভোটে রাষ্ট্র ক্ষমতা নির্ধারণ হবে।
সভাপতির বক্তব্যে এস এম লুৎফর রহমান বলেন, জুলাই বিপ্লবে শ্রমিকরা নিঃসঙ্কোচে জীবন দিয়েছে। অথচ বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে শ্রমিকদের কাঙ্ক্ষিত মূল্যায়ন আমরা প্রত্যক্ষ করছি না। শ্রমিকদের রক্তের সাথে যারা বেঈমানি করছে তাদেরকে শ্রমিক জনতা ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যান করবে। আমরা ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছি। যেখানে শ্রমিকরা তাদের অধিকার ও মানবিক মর্যাদা নিয়ে সম্মানের সাথে বসবাস করবে। আগামী দিনে যারা শ্রমিকদের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে শ্রমিকরা তাদের পক্ষে কণ্ঠ উঁচু করবে।