কক্স২৪নিউজ ডেস্ক।
চট্টগ্রাম জেলার দক্ষিণ প্রান্তে বঙ্গোপসাগরের কূলঘেঁষে অবস্থিত এক সম্ভাবনাময় জনপদ ধলঘাটা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই উপকূলীয় অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতিতে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
প্রকৃতির সঙ্গে এই সংগ্রামী মানুষেরা তাদের কঠোর পরিশ্রম দিয়ে বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। চিংড়ি চাষ, লবণ উৎপাদন ও সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের মাধ্যমে ধলঘাটার মানুষ শুধু নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করছে না, বরং জাতীয় অর্থনীতিতেও রাখছে যুগান্তকারী অবদান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যথাযথ সরকারি উদ্যোগ ও টেকসই উপকূল সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে ধলঘাটা হয়ে উঠতে পারে দেশের অর্থনৈতিকভাবে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপকূলীয় অঞ্চল।
১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ধলঘাটার জনজীবনকে তছনছ করে দিয়েছিলো। তখন থেকে আজ পর্যন্ত টেকসই কোনো বাঁধ বা উপকূল সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। প্রতিবার বর্ষা ও জোয়ারে এই জনপদের মানুষদের ভোগান্তি পোহাতে হয়; ভিটেমাটি হারায়, ফসল নষ্ট হয়, তবুও তারা হার মানেনি।
বছরের পর বছর ধরে এই বেড়িবাঁধে সামান্য সংস্কার ও অস্থায়ী মেরামতের কাজ করেই যেন দায় সেরেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে বর্ষা মৌসুম কিংবা উঁচু জোয়ারের সময় বেড়িবাঁধের একাধিক স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হয় , আর সেই সঙ্গে বাড়ে মানুষের জীবন ও জীবিকার ঝুঁকি।
স্থানীয় কৃষক ও জেলেরা জানান, বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও চিংড়ি ঘের সব পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে তাদের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় লাখ লাখ টাকায়, যা তারা কোনোভাবেই পুষিয়ে উঠতে পারেন না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জোড়াতালি দেওয়া বেড়িবাঁধই ছিল তাদের একমাত্র আশ্রয় ও ভরসা। কিন্তু এবার সেই ভরসার বাঁধও মানবসৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিবেদকের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে এক চাঞ্চল্যকর দৃশ্য— বেড়িবাঁধ রক্ষাকারী বালিআড়ি অবৈধভাবে কেটে নেওয়া হচ্ছে দিনের আলোয়, প্রশাসনের নাকের ডগায়।
স্থানীয়দের ভাষ্যে, কিছু প্রভাবশালী মহল ও ঠিকাদারি সিন্ডিকেট রাতের অন্ধকারে এবং কখনো দিনের বেলায়ও বেড়িবাঁধ সংলগ্ন স্থান থেকে বালি উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে বেড়িবাঁধের মূল কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ছে, ফাটল ধরছে, আর সামান্য জোয়ারের পানিতেই ভয়াবহ ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
একজন স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা বলেন,
“বাঁধটা না থাকলে এই এলাকা বাঁচবে না। অথচ যেই বাঁধ আমাদের জীবন বাঁচায়, সেই বাঁধটাই কিছু মানুষ বিক্রি করে খাচ্ছে।”
এমন ভয়াবহ অবস্থার পরও প্রশাসনের নীরবতা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। জনগণ মনে করছে, এ এক পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ, যার শিকার হচ্ছে নিরীহ উপকূলবাসী।
এ ঘটনায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, বারবার অভিযোগ করেও কোনো ফল না পাওয়ায় জনগণ এখন নিজেদের উদ্যোগে প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে,
“এভাবে চলতে থাকলে স্থানীয় জনগণ যে কোনো সময় সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে।”
প্রতিবেদক
মোস্তফা মুকুল।