ভূমিকম্পের হলে কি করবেন?
দৌড়াবেন না, আশ্রয় নিন! (৫ম তলা বা তার উপরে)
উঁচু ভবনে (৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম তলা বা তার উপরে) থাকলে, বের হওয়ার চেষ্টা করা সবচেয়ে বড় ভুল। বাস্তবতা হলো, নিচের তলা ভেঙে পড়ার আগেই আপনি সিঁড়িতে বিশৃঙ্খলা, ধাক্কাধাক্কি এবং অন্ধকারে আটকা পড়বেন।
ভয়ঙ্কর সত্য:
৯০% মানুষ সিঁড়িতেই মারা যায় বা গুরুতর আহত হয়। ভূমিকম্প শুরু হলে সিঁড়ি বা বারান্দা অত্যন্ত বিপজ্জনক!
দ্রুত আশ্রয় নিন (Drop—Cover—Hold On):
বিছানায় থাকলে:
শক্তভাবে খাটের নিচে ঢুকে পড়ুন।
অন্যান্য কক্ষে থাকলে:
মজবুত টেবিল বা ডেস্কের নিচে আশ্রয় নিন।
আশ্রয় না পেলে:
শক্তিশালী দেয়ালের কোণে শরীর গুটিয়ে বসে মাথা ও ঘাড় ঢেকে রাখুন।
মাথা সুরক্ষিত রাখুন:
বাথরুমের বালতি উল্টো করে, হেলমেট, ঝুড়ি বা শক্ত ব্যাগ যা পাবেন, তা দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন।
বারান্দা এড়িয়ে চলুন:
রেলিং বা স্লাব ভেঙে পড়তে পারে।
২. সৌভাগ্যবানদের জন্য কৌশল (১ম ও ২য় তলা) 🚪
আপনি যদি ১ম বা ২য় তলায় থাকেন, তবে আপনার হাতে বের হওয়ার সুযোগ আছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে দ্রুততার সাথে।
দরজা খোলা রাখুন:
কম্পন শুরু হওয়ার সাথে সাথে দরজা খুলে দিন (জ্যাম হওয়া এড়াতে)।
তাৎক্ষণিক নির্গমন:
১৫-২০ সেকেন্ডের মধ্যে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে রাস্তায় চলে আসুন।
দূরত্ব বজায় রাখুন:
রাস্তায় এসে কখনো বিল্ডিং-এর গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না। ভেঙে পড়া রোধে ভবন থেকে কমপক্ষে ১০০ ফুট দূরে সরে যান এবং খোলা মাঠে চলে যান।
৩. ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে গেলে করণীয় (Think Fast!) 🗣️
আটকে পড়লে শান্ত থাকা এবং সঠিক সংকেত দেওয়া আপনার জীবন বাঁচাতে পারে।
চিৎকার করবেন না:
চিৎকার করলে ধুলো ফুসফুসে ঢুকতে পারে এবং গলা দ্রুত শুকিয়ে যাবে।
সংকেত ব্যবহার করুন:
হুইসেল থাকলে একটানা বাজান। না থাকলে, আন্তর্জাতিক রেসকিউ সিগন্যাল হিসেবে দেয়ালে বা শক্ত পাইপে তিনবার টোকা দিন।
সংরক্ষণ করুন:
মোবাইল টর্চ অন করে রাখুন। কথা বলবেন না, ব্যাটারি বাঁচান।
নিরাপত্তা:
মুখে কাপড় চেপে ধরুন যাতে ধুলো শ্বাসযন্ত্রে প্রবেশ না করে।
৪. দৈনন্দিন প্রস্তুতি (আজ থেকেই শুরু করুন) 🛠️
প্রস্তুতি ছাড়া ঢাকায় ভূমিকম্প হলে বেঁচে থাকা ভাগ্যের উপর, কিন্তু প্রস্তুতি থাকলে বেঁচে থাকা ভাগ্যের হাতে!
ঘুমের প্রস্তুতি:
বিছানার পাশে একজোড়া জুতা, একটি হেলমেট এবং একটি হুইসেল রাখুন।
ভারী আসবাব: ভারী আলমারি, ফ্রিজ, এবং টিভি এমন জায়গায় রাখুন যাতে পড়ে গিয়ে আঘাত না করতে পারে। পারলে দেওয়ালের সাথে বেঁধে রাখুন।
গ্যাস সিলিন্ডার:
চেইন বা ফিতা দিয়ে মজবুতভাবে বেঁধে রাখুন।
নির্গমন:
দরজা যেন কখনও অটো-লক না হয়। জরুরি চাবি সবসময় কাছাকাছি রাখুন।
৫. শেষ বার্তা ও মানসিক শক্তি 🙏
এই ঘনবসতিপূর্ণ শহরে, যেখানে ৫ থেকে ৭ তলার অ্যাপার্টমেন্টই প্রধান আবাসন, সেখানে সচেতনতা জীবনের সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ।
আমার সিদ্ধান্ত:
"আমি ৪র্থ তলার উপরে—তাই আমি দৌড়াবো না, শুধু টেবিল বা বিছানার নিচে ঢুকবো। আমি যদি ১ম-২য় তলায় থাকি—প্রথম ২০ সেকেন্ডে বের হয়ে যাবো।"
প্রকৃতির কাছে আত্মসমর্পণ:
জীবন কখনও কখনও কঠিনভাবে মনে করিয়ে দেয়—প্রকৃতি কত শক্তিশালী, আর মানুষ কত সহজেই ভেঙে যেতে পারে। দুর্যোগে মানুষের কিছু করার থাকে না, কিন্তু একটু সচেতনতা, একটু প্রস্তুতি—এটাই আমাদের শক্তি।
জীবন মানে শুধু শ্বাস নেওয়া না, জীবন মানে সচেতন থাকা, আর প্রতিটি মুহূর্তকে সম্মান করা, যেন এটা শেষ সুযোগ।
আপনার শেষ কথাটিই আমাদের প্রেরণা:
জীবন অনিশ্চিত, কিন্তু কৃতজ্ঞতা নিশ্চিত। যা আছে, যতটুকু আছে—সেটাই আমাদের শক্তি।
সৌজন্যে বাংলাদেশ বেতার।
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ বাকী উল্লাহ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত