কক্স২৪নিউজ ডেস্ক।
ভূমিকম্প ঝুঁকি বিবেচনায় বাংলাদেশকে তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে—জোন-১ উচ্চঝুঁকিপূর্ণ, জোন-২ মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এবং জোন-৩ নিম্নঝুঁকিপূর্ণ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রকাশিত মানচিত্রে এসব ঝুঁকিপ্রবণ এলাকার অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে।
মানচিত্র অনুযায়ী, দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বেশ কয়েকটি অঞ্চল জোন-১ হিসেবে সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ফল্ট লাইন বা প্লেট বাউন্ডারির কাছাকাছি হওয়ায় এসব এলাকায় কম্পনের প্রবণতা বেশি। বিশেষ করে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৯ জেলা, ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল, গাজীপুর, নরসিংদীর কিছু অংশ, পুরো কিশোরগঞ্জ জেলা, কুমিল্লা বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির বেশ কিছু অঞ্চল উচ্চঝুঁকিপূর্ণ। বিপরীতে খুলনা, যশোর, বরিশাল ও পটুয়াখালী জোন-৩-এর অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিপ্রবণ।
পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৭৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশে অন্তত পাঁচবার শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, যার প্রায় সবগুলোর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজারের দিকে। ফলে ভবিষ্যতে এসব এলাকায় আরও বড় ধরনের কম্পনের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ভারতের আসাম ও মেঘালয় সীমান্তবর্তী সিলেট–ময়মনসিংহ অঞ্চলকেও উচ্চঝুঁকির এলাকায় ধরা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের চারদিকে পাঁচটি ভূমিকম্প উৎপত্তিস্থল রয়েছে—মিয়ানমার থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত প্লেট বাউন্ডারি-১, নোয়াখালী থেকে সিলেট পর্যন্ত প্লেট বাউন্ডারি-২, সিলেট থেকে ভারতের দিকে প্লেট বাউন্ডারি-৩, আর দেশের ভেতরে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের কাছে ডাউকি ফল্ট ও মধুপুর ফল্ট। এগুলোর যেকোনো একটি সক্রিয় হলে বড় ধরনের কম্পন সৃষ্টি হতে পারে।
রাজউকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকায় প্রায় ২১ লাখ ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ লাখ ভবন দ্বিতল বা তার চেয়ে কম, তাই এগুলোর ঝুঁকি তুলনামূলক কম। তবে ৪ থেকে ৩০ তলা পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ ভবন উচ্চঝুঁকিতে আছে। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে এসব ভবন ধসে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। তাই জরুরি ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো সংস্কার করে ভূমিকম্প-সহনশীল করে তোলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্প সবচেয়ে ভয়াবহ এবং অনিশ্চিত প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর অন্যতম। এটি প্রতিরোধের ক্ষমতা কারও হাতে নেই। তবে ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে ভূমিকম্পের আগাম সংবাদ বা পূর্বাভাস প্রাপ্তির ওপর বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হয়। এক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বেশ অগ্রগতি হয়েছে। ভূমিকম্পের আগাম পূর্বাভাসের গবেষণায় জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও বেশকিছু দেশ বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে।
ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের বিদ্যমান সক্ষমতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ডা. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, বাংলাদেশ অনেক আগে থেকেই ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। শুক্রবারের ভূমিকম্প সেই আতঙ্ক হয়তো আরও কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, শুধু ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প যেটার উৎপত্তি ঢাকা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে তাতেই যদি ঢাকা এবং আশপাশের এলাকার স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে এর বড় কম্পন হলে নিঃসন্দেহে বলা যায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। বিল্ডিং কোড অনুসরণ ছাড়াই রাজধানীতে অহরহ ভবন নির্মিত হচ্ছে। সরকারকে এ বিষয়গুলো ভাবতে হবে।
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ বাকী উল্লাহ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত